Qshop App

আষার মাস। বাইরে আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি। সময়টা রাত্রিবেলা। হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন স্বাস্থ্যবান একজন লোক। পেশায় তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। ঘুষ খান তবে আল্লাহকে মানেন। বহুবার হজ্জে গিয়েছেন। হাসপাতালে তিনি একা নন। তার সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিল। তিনি গেছেন অপারেশন থিয়েটারে। সন্তান জন্ম দিবেন। ঘড়িতে রাত ১১টা ১০মিনিট। ডাক্তার সাহেব হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসছেন। লোকটির পাশে এসে বললেন, “মিষ্টি খাওয়ান, আপনার মেয়ে হয়েছে”। লোকটি শুকুর আলহামদুলিল্লাহ বলে চেঁচিয়ে উঠল। প্রথম সন্তান তাও আবার কন্যা। কন্যা সন্তান মানেই জান্নাত। মানুষের মুখের কথা নয়। হাদিসের বাণী। জামে তিরমিযী শরীফের ১৯১৩নং হাদিস। মদিনা মুনিব (দ:) বলেছেন, যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে সেই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড়াল হবে। তার জান্নাতে যাওয়ার টিকেট রেডি। আদর করে বিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা খতম। একটু পর টাওয়ালে করে নার্স নিয়ে আসছে ফুটফুটে এক মানবীনি কে। লোকটি চোখের দিকে তাকাতেই মায়ায় পরে গেল। এজন্য রূপকথার কোনো রাজকন্যা। আকাশে মেঘ ঠাসা। চাঁদের নাম গন্ধও নেই। চাঁদ থাকলে তাকে চাঁদের সাথে তুলনা করা যেত। কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি মেয়ের নামও ঠিক করে ফেললেন। ইসলামিক নাম। নামের শুনলেই মায়া জন্মে এমন। 

ধীরে ধীরে ছোট্ট সোনাপাখিটি বড় হচ্ছে। বাবা মার একমাত্র মেয়ে। আদরের কোনো কমতি নেই তার। বাবা তো প্রায় পাগল মেয়ের জন্য। মেয়ের বয়স ৪বছর হলো। আধুনিক সোসাইটি তে এখন মেয়ে বাইরে বের হয়ে খেলাধুলা করবে ছোট্ট বাচ্চাদের সাথে। ভালো জামা কাপড় দরকার। বর্তমানে দেশের ট্রেন্ড পশ্চিমা কালচার। এদের মতো জামা কাপড় পড়লেই নিজেকে সুশীল সমাজের দাবিদার মনে হয়। জিন্স, পেন্ট, টি শার্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোই এখনকার ফ্যাশন। বাবা মাও মেয়েকে ফ্যাশনে নিয়ে গেলেন। এগুলো পড়াতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে মেয়েও এই কাপড়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এই কাপড়ই তার কাছে কম্ফোর্টেবল মনে হয়। আস্তে আস্তে মেয়ে বড় হচ্ছে। পশ্চিমা কাপড় পুরোপুরি ধারণ করেছে। মাঝে মাঝে কোনো উৎসবে সেলোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি পড়ে। হাজার হোক দেশটা বাঙালির। সংস্কৃতি বলে একটা ব্যাপার আছে নাকি। মেয়ে ঘুরতে পছন্দ করে। বাবাও মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। তাই সময় পেলেই ফ্যামিলি ট্রিপে যান। ঘুরে বেড়াতে ইসলামে বাধা নেই। এটা ভালো দিক। তবে সবকিছুই লিমিটের মধ্যে থাকতে হবে। বাইরে বেড়াতে গেলে তারা সবাই আধুনিক হয়ে যান। পরিবারের সবাই যান সুইমিংপুলে। সাঁতার কাটতে। পানিতে নাকি ফুর্তি করতে মজা। পাশে আরো অসংখ্য মানুষ আছে। সবাই এই নগ্ন নিত্য দেখছেন। এ নিত্য খেলায় এখানে সবাই লিপ্ত। সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছেন। অশ্লীলতা কোন পর্যায়ে গেছে সে ব্যাপারে কোনো খেয়াল হয়না। এখানে সবাই অশ্লীল। অশ্লীলদের সামনে অশ্লীলতা করা যায়। এটাই বোধহয় নিয়ম। যাইহোক মেয়ের কথায় আসি। বাবা মার প্রশ্রয়ে সে অন্তরে পশ্চিমা সংস্কৃতি লালন করছে। এই সংস্কৃতি তাকে সুশীল সমাজ চিনতে সাহায্য করছে। আধুনিক মেয়ে হওয়ার সব যোগ্যতাই সে অর্জন করেছে। মেয়ে এখন বড় হয়েছে। বাবা মার বাইরেও তার আলাদা জগৎ তৈরি হয়েছে। বন্ধু বান্ধবদের জগৎ। এখন সে এদের নিয়েও মজায় লিপ্ত। ছুটি পেলেই বন্ধুরা মিলে যায় ট্রিপে। সুইমিং, ডান্সিং, হাইকিং সবকিছুই থাকে ট্রিপে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন মেয়েটি ব্যানামাজি। তবে ম্যাজিক এখানেই। মেয়েটি নিয়মিতই নামাজ পড়ে। বাবার হুকুম। নামাজ পড়তে হবে। নয়তো বাবা জান্নাতি হবেন না। মেয়েটি তাই করে। একদিনের ঘটনা। রাত ১০টা। মেয়ে বাসায় ফিরছে। গিয়েছিল একটি ট্রিপে। দেশের নামকরা এক পার্কে। অনেক মজা হয়েছে। ডান্সিং, সুইমিং, আড্ডা , খাওয়া দাওয়া সবই। পরনে ওয়েস্টার্ন কালচারের ড্রেস পড়া ছিল। ট্রিপ শেষে বাসায় ফেরার পথে পিছু নেয় কিছু যুবক। এদের মস্তিষ্কে এখন এক নগ্ন খেলা উকি মেরেছে। এরা মেয়েটার ঠিক পিছনে পিছনেই হাঁটছে। সুযোগের অপেক্ষা। বাসা থেকে ঠিক ১৫মিনিটের দূরত্বে এক নীরব জায়গায় ঝাপটে ধরে মেয়েটিকে। একটি গোডাউনের মতো জায়গায় নিয়ে পিশাচের চেয়েও ভয়ঙ্কর আচরণ করে নরপশু গুলো। পাঠকরা হয়তো বুঝতে পারছেন তা…….
পরের ঘটনা। দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমার বোনকে ধর্ষণ কেন, প্রশাসন জবাব চাই। প্রশাসন জবাব দিয়েছে। নরপশুদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের শাস্তি দেওয়া হবে। এদিকে মেয়ের বাড়ির বাড়ির অবস্থা করুন। বাবা প্রায় হার্ট এটাকের মতো অবস্থা। সবাই কান্না কাটি করে এক হাল।
এখন মূল কথায় আসি। জন্মের পর বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়ের জন্য জান্নাতি হওয়ার। এখন কি সেই স্বপ্ন আছে? যারা ধর্ষণ করেছে সব দোষ কী তাদেরই কেবল? মেয়ের কোনো দোষ নেই? অনেকে মেয়েকে দায়ী করবেন। তবে নাহ। যতটুকু দোষী মেয়ে। তারচেয়েও দোষী মেয়ের বাবা-মা। এরা চাইলেই পারতেন মেয়েকে ইসলামিক কালচারে বড় করতে। তা করেননি। আদর আহ্লাদে মেয়েকে হারাম পথে ঠেলে দিয়েছেন। নিজেরাই এসব পথ দেখিয়েছেন যে পথে কেবল বিপদই ডেকে আনে। এরপরও কী তিনি জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন? বোখারী শরীফের ৮৯৩ নং হাদিস। মদিনা মুনিব (দ:) বলেন, পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। আপনি পরিবারের কর্তা। আপনার উপর আপনার পরিবারের দায়িত্ব। পরিবারের কোনো সদস্য যদি ভুল করে তবে এর দায় আপনাকেই দিতে হবে। ইসলাম বলছে, বিয়ের আগে নারীদের দায়িত্ব থাকে পিতার উপর এবং বিয়ের পর স্বামীর উপর। তাই তার ভুলের জন্য আপনিই দায়ী হবেন। পশ্চিমা পোশাক ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা জঘন্য জেনেও আজ নারীরা এর দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। হুজুরপাক (সা.) ঐসকল পুরুষকে অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং ঐসকল নারীদের অভিশম্পাত করেছেন যারা পুরুষদের পোশাক পরে। আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদের হাদীস এটি। অনেক নারীই পার্টি কিংবা কোনো উৎসবে সেন্ট মেখে যান। শরীর থেকে সুগন্ধ বেরোলে কোন অদ্ভুদ কারনে এরা আনন্দ পায়। তবে এই কাজটি আপনাদের কতটা নীচে নামিয়ে দিচ্ছে তা কি আপনারা জানেন? মদিনা মুনিব ইরশাদ করেন। ‘যদি কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে, যেন মানুষরা তার সুগন্ধ অনুভব করতে পারে তাহলে সে মহিলা ব্যাভিচারিনী বলে বিবেচিত হবে।’ (ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরিমিযি, হাকেম ও মুসনাদে আহমদ)। শব্দগুলো শুনে আপনাদের গা না জললে বুঝবেন ঈমানে গলদ রয়েছে।কিছু নারী আছেন এমন যারা বোরকা ঠিকই পড়েন। তবে বোরকার মধ্যেও স্টাইল খুঁজেন। অনেকে নিজের মাথা উঁচু করার জন্য কি যেন মাথায় লাগান। ফলে হিজাব চেহারা থেকে বেশি বড় মনে হয়। এটি ইসলামে সম্পূর্ণ রূপে হারাম। হারাম। হারাম। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিস।  হযরত আবু হোরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুরপাক (সা.) এরশাদ ফরমায়েছেন- দুই শ্রেণীর দোজখবাসী আমি এখনো দেখিনি! (অর্থ্যাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে এদের দেখা যাবে) এক শ্রেণী হলো ঐসকল নারী যারা পোশাক পরিহিতা হয়েও উলঙ্গ, যারা পথচ্যুত এবং অন্যদের পথচ্যুত করবে, এদের মাথা হবে উটের পিঠের চুটির মতো ঢং করে বাঁকানো, এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পাবে না। এখন একটু চিন্তা করুন ইসলামিক জ্ঞান থাকাটা কতটুকু জরুরি একটি পরিবারের জন্য। আপনি যেটাকে পর্দা মনে করছেন সেটাও অনেক বড় হারাম কাজ। এই কাজগুলো সম্পর্কে আপনার মসজিদের ইমাম সাহেব হয়তো প্রতি সপ্তাহেই আলোচনা করেন। আপনি সেগুলো কর্ণপাত করেন না। নিজেকে সুশীল মনে করেন। মৌলবাদী বলে আলেমদের গালি দেন। তাদেরকে ব্যাকডেটেড মনে করেন। তবে হাশরের দিন আল্লাহ আপনার জন্য কি রেখে দিয়েছেন তা সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। তারপরও কী আপনি জান্নাতের দাবিদার!!
আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুক। মেয়ের বাবা যারা আছেন, আপনার সন্তানকে সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিন এবং পর্দা প্রথায় নিয়ে আসুন। এটি ব্যাকডেটেড না, বরং এটিই আসল কালচার। সব ক্ষেত্রে ইসলামিক নিয়ম মেনে চলুন। আপনার সচেতনতাই পারে ভয়াবহ বিপদ থেকে আপনার সন্তানকে রক্ষা করতে। আল্লাহ সহায়ক হোন।

লেখকঃ
গোলাম শফিউল আলম মাহিন
শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *