Qshop App

সৃষ্টিতে সেরা মানবজাতি। আর সুখ-দুঃখ কিংবা আনন্দ বেদনা নিয়েই মানুষের বসবাস। মানুষ আবার সামাজিক জীবও বটে। সমাজের আর দশটা মানুষের সঙ্গে না মিশে একজন মানুষ সর্বদা একা একা চলতে পারে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু তারপরও সারাদিনের কিছুটা সময় একা কাটাতে প্রতিটা মানুষই পছন্দ করে। সমাজ থেকে একা, জন-কোলাহল থেকে মুক্ত, একা নিজের মতো থাকা। এর মধ্যেই রয়েছে এক তৃপ্তির আমেজ, নিজের আত্মাকে চেনার মাধ্যম। আর এই একাকীত্বে সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে সঙ্গ দিয়ে আসছে মাথার উপরে থাকা বিস্তৃত সেই নীল আকাশ। নীল বর্ণের এই আকাশকে কত সহস্র কবি আরবি থেকে ফারসি, উরদু-হিন্দি হয়ে বাঙ্গালি কিংবা পশ্চিমা ইংরেজি বা গ্রিক ভাষায় অসংখ্য পঙক্তি, সহস্র কবিতা লিখেছেন তার আয়ত্বা নেই। শুধু কী তাই? মহান রব্বুল আলামিনও যে এই আকাশ নিয়ে ভাবতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

اَفَلَمۡ یَنۡظُرُوۡۤا اِلَی السَّمَآءِ فَوۡقَهُمۡ کَیۡفَ بَنَیۡنٰهَا وَ زَیَّنّٰهَا وَ مَا لَهَا مِنۡ فُرُوۡجٍ 

তারা কি তাদের উপরে আকাশের দিকে তাকায় না, কিভাবে আমি তা বানিয়েছি এবং তা সুশোভিত করেছি? আর তাতে কোন ছিদ্র নেই। সুরা কাফ; আয়াত নং-৬

আপনি যদি বিশাল সেই আকাশের দিকে ভাবনার উদ্দেশ্যে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখলে আপনার মনে হবে এই গোটা জাহান একটি গৃহ, যেখানে মজুদ রয়েছে আমাদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র। আকাশটা ছাদের মতো আর তার নিচে থাকা জমিনটা বিছানা। রাতের অন্ধকারে বিশাল সেই ঘরটাকে আলোকিত করার জন্য আকাশের তারা গুলো একেকটা আলোক বাতির প্রতিচ্ছবি। আর মাটির গভীরে মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ গুলো এমনভাবে সংরক্ষিত রাখা যেমনটা সিন্ধুকে গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার মতো ব্যাপার। বিশাল এই ঘরের প্রতিটা জিনিসই নিজ নিজ কর্ম সাধনে নিয়োজিত। এই গৃহের প্রধান মানবসমাজ, আর এই গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র মানুষের উন্নয়ন সাধনের জন্য। প্রতিটা জিনিসই গৃহ প্রধানের উন্নয়নে সংগ্রহীত। উদ্ভিত থেকে জীবজগৎ সবই নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত।

পৃথিবীটা তোমারই জন্য, তুমি পৃথিবীর জন্য নয়। -আল্লামা ইকবাল

আল্লাহ আকাশকে এমন রং দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, যা চোখের দৃষ্টির জন্য উপযোগী এবং শান্তিদায়ক। চিন্তা করুন, যদি আকাশ উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত হতো, তবে টা চক্ষুকে ঝলসিয়ে দিত। এক্ষেত্রে নীল বর্ণ দৃষ্টির জন্য পছন্দসই এবং আকর্ষণীয়। বিজ্ঞান বলে, নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, তাই আকাশে এই আলোর বিক্ষেপণ বেশি হয় এবং আকাশ নীল দেখায়।

মানুষ যখন বিশাল আকাশের সীমাহীন প্রসারতা দেখে, তখন তার হৃদয় আনন্দিত ও উল্লাসিত হয়ে উঠে। বিশেষ করে আকাশের নক্ষত্ররাজি যখন পূর্ণভাবে ফুটে উঠে। চন্দ্র তার উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত করে পুরো পৃথিবীটাকে। দুনিয়ার আদি থেকে বড় বড় বাদশাহ নিজ নিজ শাহী মহল বা প্রাসাদ গুলোকে সুসজ্জ্বিত করার জন্য উত্তম থেকে উত্তম জিনিসগুলো সংগ্রহ করে। দরবারের ছাদ সুদৃশ্য কারুকার্য দ্বারা সজ্জ্বিত করে। দেখে মন জুড়ায় হৃদয় কুড়ায়। কিন্তু একটা সময় বিতৃষ্ণা আসে সেই কারুকার্যে। মন থেকে ভাল লাগে না আর এই সুসজ্জ্বিত জিনিস গুলো। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মহান রব্বুল আলামীনের সৃষ্টি আকাশ। এর প্রাকৃতিক শোভা সৌন্দর্য, সীমাহীন বিশালতা, আর নক্ষত্ররাজির চাকচিক্যের প্রতি যতই দৃষ্টিপাত করা হোক না কেন, কখনোই বিতৃষ্ণা জন্মাবে না। উল্টো এসবের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আল্লাহর অসীম কুদরতের ছাপ এবং মোহ হৃদয়ে অঙ্কিত হবে। তখন মন থেকে আপনা আপনিই উচ্চারিত হবে-

رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا 

হে আল্লাহ! তুমি এসব অনর্থকই সৃষ্টি করনি। (সুরা আল-ইমরান; আয়াতঃ ১৯১)

এজন্যই অনেক সুফি-দরবেশ বলতেন, যখন আপনার মন খারাপ হয়, তখন আকাশের দিকে তাকান, দেখুন আপনার রবের কুদরতের নিদর্শন গুলো, এতে মনের দুঃখ উপশম করার যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। তাকিয়ে দেখুন নক্ষত্রগুলোর দিকে। তারপর গভীর চিন্তা করুন এর উপকারিতা নিয়ে। মানুষ কিভাবে উপকৃত হচ্ছে এর দ্বারা। মহা সমুদ্রের অন্ধকার রাত্রিতে এই নক্ষত্ররাই তো সমুদ্র যাত্রীদের পথ দেখায়। বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীই স্বীকার করেন যে তারকার যাতায়াতের পথ সৃষ্টি হয়েছে এবং এক তারকার অধিবাসী অন্য তারকায় যাতায়াত করে থাকে। আজকের সমাজে বিজ্ঞান আকাশের দিকে তাকানোর কিছু উপকারিতাও বর্ণনা করেছে। সেগুলো হলো-
১) মানসিক কষ্ট দূর হয়।
২) মনের কু-ধারনা দূর হয়।
৩) মন থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়।
৪) আল্লাহর স্মরণ জীবন্ত হয়।
৫) ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়।
৬) রোগ বিশেষের উপকার হয়।
৭) অন্তরে আল্লাহর মহাত্ম উপলব্দি হয়।
৮) চঞ্চল মনে স্থিরতা আসে।
৯) প্রার্থনার মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *